জেনে নিন ঢেঁড়স এর কিছু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে!
ঢেড়স একটি জনপ্রিয় সবজি। কাঁচা অথবা রান্না করে উভয় অবস্থাতেই এটি খাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র অঞ্চলেই ঢেঁড়স জন্মাতে দেখা যায়। এবং হাটে বাজারেও এটি বিক্রি করতে দেখা যায়। দামে সস্তা হওয়ার কারণে কম বেশি সবাই এটি খেয়ে থাকে। তবে অনেকে আছে যারা এটি খেতে বেশি পছন্দ করে না।
আজকে আমি আপনাদের জানাবো ঢেঁড়স কেন খাবেন? এবং ঢেড়সে থাকা ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদানগুলো সম্পর্কে!
ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ও ফলেট। সেইসঙ্গে আরো রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, আয়রন, পটাশিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা কেরটিন। এই সবগুলো উপাদান ঢেঁড়সের ভিতর প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এবং যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। এগুলো একসাথে ডায়াবেটিস, একজিমা ,অ্যানিমিয়া ,সহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে ।সেই সাথে ঢেঁড়স কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে । নিয়মিত একবাটি পরিমাণ ঢেঁড়সের তরকারি খেলে কিডনির ভেতরে জমতে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কোন ক্ষতি হতে পারে না । এবং ভবিষ্যতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
প্রতিনিয়ত ঢেঁড়স খাওয়ার ফলে ফলেটের ঘাটতি মিটায়।
একটা মানুষকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে শরীরে, যে যে উপাদান গুলো প্রয়োজন পড়ে তার মধ্যে ফলেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তাইতো দেহের ভেতরের এই উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে ঢেঁড়স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা প্রতিনিয়ত ঢেরস খায় তাদের এই ঘাটতি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ফলে মানুষ সুস্থ ও নীরব থাকে।
কনসিপটেশনের প্রকোপ রোধ করে ।
ঢেরসের ভিতরে থাকা ফাইভার শুধুমাত্র হার্টের যত্ন করে না, সেই সাথে বাওয়েল মুভমেন্ট উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে কনসেপ্টেশন বদহজম এবং গ্যাস অম্বলের মতো রোগ এর প্রতিকার করে থাকে। প্রসঙ্গত একাধিক কেস অধ্যায়ন করে পাওয়া গেছে যে, যদি প্রতিদিন ঢেঁড়স খাওয়া হয় তাহলে কোলন ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়।
ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে এই ঢেঁড়স।
কারণ ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা অন্য সব সবজিতে খুবই কম পরিমাণে থাকে। সুতরাং এই সবজিটি খেলে একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। তেমনি কোষেদের বিভাজনও নিয়ম মত হয়।কারণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের উপস্থিতি ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান দের শরীরের কোষের পরিবর্তন হওয়ার কোন সুযোগ দেয় না। যে কারণে শরীরে ক্যান্সারের সেল জন্মাতে পারেনা। প্রসঙ্গত কোষের এইভাবে চরিত্র বদলানো ও ক্ষতিকর কোষে রূপান্তরিত হওয়াকে মিউটেশন অফ সেল বলা হয়ে থাকে।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে ঢেঁড়সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ডায়েটে ঢেঁড়সের অন্তর্ভুক্ত কোন একটা খাবার মেনুতে রাখতে হবে। কারণ এই সবজিটির ভেতরে থাকা ফাইবার অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণত আসে না। সেইসঙ্গে বারে বারে খাওয়ার ইচ্ছা ও চলে যায়। যে কারণে আপনার শরীরের ওজন বাড়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
এমিনিয়া রোগ প্রতিরোধ করে!
বর্তমানে এমিনিয়া নামক রোগের প্রকোপ অত্যন্ত মহামারী আকার ধারণ করেছে। এবং এই রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢেঁড়স খুবই কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এতে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এগুলো লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে এমিনিয়ার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। বাংলাদেশ ভারত মায়ানমার সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে বিশেষ করে মহিলাদের ভিতর এই রোগটি মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। আমাদের দেশে তো এমিনিয়ার প্রকোপ কমাতে বিশেষ নিয়ম ও গ্রহণ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে এই সবজিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। যা বলার বাইরে থাকে।
শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে এই ঢেড়স।
যে কারণে হার্ট সুস্থ থাকে এবং স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আসলে এই সবজিটি ফাইবার দ্বারা সমৃদ্ধ। যে কারণে এই উপাদানটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খাওয়ার ফলে হাড়ের গঠনের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মত রোগকেও দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কারণে বিশেষ করে ৪০ বছরের পর থেকে প্রতিটা মহিলা নিয়ম করে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে আমাদের দেশে মহিলাদের বয়স 40 পেরোতে না পেরেতেই তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। শুধু মহিলারা নয় পুরুষদেরও এরকম সমস্যা হচ্ছে অহরহ । ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। তো এরকম সমস্যা সমাধানে বুঝতেই পারছেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মেনুতে ঢেঁড়স অবশ্যই রাখা যেতে পারে।
ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণ করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পরিসংখ্যান বলছে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানেই শেষ নয় প্রতিবছর নতুন করে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এটি ধারণা করেছেন যে, ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করবে। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশ করা একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বর্তমানে ভারতের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন। আগামী কয়েক বছরের দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে ।এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে হলে, আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। এবং নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যাতে শরীরের কোন পুষ্টি উপাদান ঘাটতি না পরে। এবং এই ডাইবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই আমাদের প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন লেটুস পাতা সম্পর্কে
তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের ঢেঁড়স সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদন। আশা করি সবার ভালো লাগছে। এতক্ষণ ধরে লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এবং প্রতিবেদনটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন নিয়মিত শরীর চর্চা করুন ।