স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য যে ১০ ধরনের খাবার খাবেন খাবারের পুষ্টি গুনাগুন

 

কামরাঙ্গা ফল কেন খাবেন? জেনে নিন এর উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক!





কামরাঙ্গা ফল আমাদের সবার পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি ফল। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ফল খুবই জনপ্রিয় ।এই ফল কাঁচা অবস্থায় খেতে যেমন টক, এবং পাকা মিষ্টি অবস্থায়ও অনেক সুস্বাদু খেতে। প্রাচীনকাল থেকেই এই  ফল খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে এই ফলের ঔষধি গুনের জন্য একটি বিশেষ পরিচিত ।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এই ফল।

কামরাঙ্গা বা তার রস কেন খাবেন?

দেখতে সুন্দর এবং লোভনীয় এই ফলটি বর্ষাকালে হয়ে থাকে। ভিটামিনের ভরপুর রসালো এই ফলটি কিছু কিছু গাছে প্রায় সারা বছরই হয়ে থাকে। বিশেষ আকৃতির এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় ফ্রেশ সবুজে ও টক হলেও পাকলে মিষ্টি হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। সুমিষ্ট এবং সুস্বাদু এই ফলটির পুষ্টিগুণে স্বাস্থ্যের জন্য রয়েছে খুবই উপকারী। 

কামরাঙ্গা ফলের পুষ্টিগুন

সাধারণত ফল হিসেবে কাঁচা অথবা পাকা উভয় অবস্থাতেই কামরাঙ্গা বেশ জনপ্রিয়। শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসাবে এই কামরাঙ্গার রস ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া আরও অনেক প্রকার রোগ আছে, যে রোগের ওষুধ হিসেবে কামরাঙ্গা ব্যবহার করা হয়। কামরাঙ্গার রস একসঙ্গে অথবা প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে করে অনেকদিন ধরে খাওয়া হয় তাহলে মিলতে পার অনেক উপকার।


(১) ভিটামিনে ভরপুর কামরাঙ্গা

এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি'র মত নানান উপকারী উপাদান। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও পুষ্টি চাহিদা পুরন করে।   প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙ্গায় আছে ৫০ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি, ০.৫ গ্রাম প্রোটিন ,০.১ গ্রাম ফ্যাট ,৫.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও কামরাঙ্গায় পাওয়া যায় বেশকিছু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম কামরাঙ্গায় ৬.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.৪ গ্রাম খনিজ, ১.২০গ্রাম আয়রন এবং ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় এই কামরাঙ্গায়।

আরো পড়ুন  শুক্রাণু বাড়াতে রসুনের কার্যকারিতা

(২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

 কামরাঙ্গা একটি আঁশযুক্ত ফল হওয়ার কারণে কোষ্ঠকানিষ্ঠ রোগের প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যাদের পেটের সমস্যা হয় অথবা ঠিকমতো খাবার হজম হয়না তাদের ক্ষেত্রে কামরাঙ্গা খুবই উপকারী একটি ফল। কামরাঙ্গা খাওয়াতে খাবার হজম নিয়ন্ত্রিত থাকে। সেইসাথে খাবারের রুচি ও বাড়ায় এই  কামরাঙ্গা । এটি খাওয়ার কারণে শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে। কোলেষ্টরল এর মাত্রা কমায় ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কামরাঙ্গাতে কিছু পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে যা মানুষের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কামরাঙ্গার গুরুত্ব অনেক বেশি। ডায়াবেটিসের রোগীরা কামরাঙ্গা খেলে তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে এছাড়াও কামরাঙ্গা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।

(৩) কামরাঙ্গার ক্ষতিকর দিক!

 কামরাঙ্গাতে প্রচুর পরিমাণে অস্ট্রেলিক এসিড রয়েছে যেটি যথেষ্ট পরিমাণে কিডনির ক্ষতি করে। এর জন্য কামরাঙ্গা কখনোই খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। কারণ যখনই কামরাঙ্গা খালি পেটে খাওয়া হয় তখন সরাসরি এটি কিডনিতে প্রভাব ফেলে। যাদের কিডনিতে  সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে কামরাঙ্গা না খাওয়াটাই ভালো। তবে খেলেও অল্পমাত্রায় এবং অন্যান্য খাবার খাওয়ার পর খেতে হবে।

Disclaimer

তো বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের এই পোস্টটি? আশা করি সবার ভাল লাগছে। এতক্ষণ কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখাটির সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের কমেন্ট পেলে আমাদের লেখার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।কথা হবে পরবর্তী পোস্টে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। নিজের খেয়াল নিবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।


 বরবটি শিম কেন খাবেন ?জেনে নিন অবাক করা কিছু তথ্য!



বরবটি শিম আমাদের সবার পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি সবজি। এটি সারা বছরে পাওয়া যায় হাটে বাজারে। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণ। রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা ও খাওয়া যায় ।আমাদের আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব এই বরবটি শিম সম্পর্কে।

চলুন দেরী না করে জেনে নেয়া যাক বরবটি শিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে!

পুষ্টিগুণ

 খাদ্য উপযোগী

 প্রতি ১০০ গ্রাম বরবটি সিমে রয়েছে জলীয় অংশ ৮৭.৫ গ্রাম, আমিষ রয়েছে ৩.০ ,শর্করা রয়েছে ৯.০, এবং মোট খনিজ পদার্থ রয়েছে ০.৮ গ্রাম, তাছাড়া ক্যালসিয়াম রয়েছে ৩৩ মিলিগ্রাম আয়রন ৫.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১ রয়েছে ০.১৪মিলি গ্রাম, এবং ভিটামিন বি ২ রয়েছে ০.৩০ মিলিগ্রাম তবে এতে ভিটামিন সি খুবই অল্প মাত্রায় রয়েছে এবং খাদ্যশক্তি ১৮ ক্যালোরি তবে এটা বলা অবশ্য যে বরবটি শিমের জাত ও স্থানভেদে এর পুষ্টিগুণ এর মান পরিবর্তন হতে পারে।

এছাড়াও বরবটি সিমের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিভাইরাস, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ক্যান্সার, প্রপার্টিস এবং এতে আরও রয়েছে ভিটামিন বি  ১ ,বি ২, ক্লোরোফিল, আমিন, ফাইবার, ফসফরাস ও বিভিন্ন প্রকার মিনারেল ।যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী পুষ্টি উপাদান।

বরবটি সিমের উপকারিতা

এটি আয়রনের ঘাটতি মেটায়। বরবটি সিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা খুবই সহজে বরবটি সিম খাওয়ার মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। এবং আয়রনের পাশাপাশি বরবটি সিমে আছে কিছু পরিমাণে ভিটামিন সি যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি আয়রন পরিশোষণ এর বিশেষ ভূমিকা রাখে।

বরবটি সিম হার্টের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ডায়াবেটিস ফাইবার, এলডিএল ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে হার্টের সুরক্ষা প্রদান করে। তাছাড়াও এটি উচ্চরক্তচাপ বুকের জ্বালাপোড়া করা শহর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে।

অস্থিসন্ধির ব্যথা কমায়

 যাদের শরীরে ভিটামিন কে এর অভাব থাকে, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে অস্থিসন্ধি স্থানগুলোতে তো তাদের জন্য বরবটির সিম ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা ভিটামিন কে এই সমস্যার সমাধান করে। তাছাড়া অস্টিওআর্থারাইটিস সমস্যা থেকে অস্থিসন্ধির উপকারে আসে ।এবং রক্ত জমাট বাঁধতে ভিটামিন কে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বরবটি সিম ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে ।এটি কম ক্যালোরিযুক্ত এবং অধিক ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমানোর কাজ করে থাকে। এছাড়াও বরবটিতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীর থেকে দুষিত যৌগ গুলোকে বের করে দেয়। ফলে শরীরে সহজে মেদ বা চর্বি জমতে পারে না। তো যাদের শরীরে বেশি পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি রয়েছে তারা বেশি করে এই বরবটি সিম খেতে পারেন।

হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এই বরবটি সিম

 হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং এর ভিতরে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নারীদের স্বাস্থ্য উপকারও গর্ভবতি মহিলাদের সুস্বাস্থে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। বরবটি সিমে থাকা প্লাবন ওয়েট উপাদান থাকে যা এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এবং এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করে। বিজ্ঞানীরা এটি প্রমাণ করেছে যে এই  উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে চমৎকার কাজ করে থাকে।

এছাড়াও আরো বহুবিধ পুষ্টিগুণে ভরা এই বরবটি সিম ।তাই যারা নিয়মিত শরীরের পরিচর্যা করে এবং পুষ্টিকর খাবার দিকে যাদের বিশেষ নজর আছে তারা অবশ্যই খাবারের মেনুতে এই বরবটি সিম রাখতে পারেন।

বন্ধুরা আমাদের আজকের পোস্টটি এই পর্যন্ত। আশা করি সবার ভালো লাগছে। লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।


 কলার মোচা কেন খাবেন ? জেনে নিন কলার মোচার উপকারিতা!



কলার মোচা আমাদের খুবই পরিচিত একটি সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এলাকায় এটি পাওয়া যায় ।তবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আনাচে-কানাতে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। আমরা তো সবাই জানি কলা একটি উপকারী ফল। এবং সেই সাথে কলার মোচার ও রয়েছে হাজারো উপকারিতা। সুস্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা কলার পাশাপাশি কলার মোচাও আমরা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি। কলার মোচা খেতে যেমন অনেক সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। কলার মোচায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন। কলার মোচা কলার মত আয়রনের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়োডিন যা মানুষের শরীরের বিশেষ পূষ্টি ঘাটতি পূরণ করে। এটি দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিনতে পাওয়া যায়। হাটে বাজারে খুবই অল্প মূল্যে পাওয়া যায় ।তবে শহরাঞ্চলে এর দাম তুলনামূলক একটু বেশি। কারণ এটি শহর অঞ্চলে খুব বেশি পাওয়া যায় না।

রক্তের মূল উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন এবং এই হিমোগ্লোবিন কে শক্তিশালী করতে কলার মোচার তুলনা হয় না। মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে, এবং রক্তের পরিমাণ ঠিক রাখতে, অথবা রক্তশূন্যতায় ভোগ করা রোগীদের ক্ষেত্রে, কলার মোচা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মানুষের রক্তের চাহিদা পূর্ণ করে। কলার মোচায় থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এবং অকালের  দৃষ্টি শক্তি হারানো এবং চোখের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান করে এই কলার মোচা।

গর্ভস্থ শিশুর ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ ভাগ মস্তিষ্কের গঠন মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় হয়ে থাকে। এজন্য গর্ভবতী নারীদের এবং শিশুদের ক্ষেত্রে সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত কলার মোজা খাওয়া উচিত। যাতে করে মা এবং শিশুর শারীরিক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয় ।এবং সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হয়।


 ত্বক এবং চুল ভালো রাখার ক্ষেত্রে কলার মোচার জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা আইরন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ত্বক এবং চুলের ক্ষেত্রে এবং ক্যালসিয়াম আয়োডিন এবং ম্যাগনেসিয়াম দাঁতের গঠনেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া বয়স্ক নারী পুরুষ ও বাড়ন্ত শিশু খেলোয়াড় বা যারা প্রতিনিয়ত শারীরিক পরিশ্রম বেশি করে তাদের জন্য এই সবজি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ। তবে আমাদের একটা দিকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে । কলার মোচা বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবেনা। প্রতিনিয়ত অল্প পরিমাণে অথবা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। কলার মোচা বেশি খাওয়ার ফলে এতে থাকা অতিরিক্ত আয়রন  শরীরে কোষ্ঠকানিষ্ঠ হতে পারে। তাই পরিমিত কলার মোচা খেতে হবে।

আরো পড়ুন

 তো বন্ধুরা আমাদের আজকের পোস্টটি পর্যন্তই। আশা করি সবার ভালো লাগছে। লেখাটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এতক্ষণ কষ্ট করে লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে। সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন ।

মধু কেন খাবেন? কিভাবে খাবেন? এটি খেলে কি হয়? জেনে নিন মধু খাওয়ার উপকারিতা!



মধু আমাদের সবার পরিচিত এবং সুস্বাদু একটি খাবার। যা সবারই খুব ফেভারিট একটি খাবার। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মধু চাষ করা হয় এবং সেখান থেকে বিপুল হারে মধু সংগ্রহ করা হয়। তবে এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবেও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মধু পাওয়া যায়। বিশেষ করে সুন্দরবনে  রয়েছে মধুর বিশাল ভান্ডার। প্রতিবছর হাজার হাজার মৌয়ালীরা মধু সংগ্রহ করতে সুন্দরবনে যায় ।এবং সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে মধু সংগ্রহ করে, সারা বাংলাদেশে সেগুলো বিক্রি করা হয়। এবং পৌঁছে দেয় সাধারণ মানুষের হাতে।

মধুর উপকারিতা এবং অপকারিতা

মধু মানুষের জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত এক অপূর্ব সৃষ্টি, যা অমৃত সমান বললেও ভুল হবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শরীরের যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর ভূমিকা অপরিসীম। প্রাচীন শাস্ত্রে মধুকে মহা ঔষধ বলেও আখ্যা দেওয়া আছে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদ এবং ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে মধুকে বিশেষ স্থানে মর্যাদা দিয়েছে।  এটি যেমন মানুষের বল বৃদ্ধি করে তেমনি খেতেও সুস্বাদু ও উত্তম উপাদেয় খাদ্য নির্যাস, এবং রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র। আর সে কারণেই খাদ্য ও ওষুধ এই উভয় পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ মধুকে, প্রাচীনকাল থেকেই পারিবারিক পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক পানীয় হিসেবে সব দেশের মানুষ এটি ব্যবহার করে আসছে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে। মধুতে যেসব পুষ্টিগুণ বা পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার ভেতর প্রধান হলো,  সুগার বা চিনি। সুগার আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি। কারণ কথিত আছে যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা আছে তারা এই সুগার জাতীয় খাবার খেতে পারে না। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ এই দুটি সরাসরি মোটাবোলাইজড হয়ে যায় এবং এটি চরবি হিসেবেও জমা হয় না। যে কারণে ডায়াবেটিসের রোগীরাও মধু খেতে পারবে। মসকো বিদ্যালয় মধুর নমুনা পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছে যে, এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড,  টিন, ও জিংক, এসিড যেমন (মেলিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিজ এবং অক্সালিক অ্যাসিড,) কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোন, এসিটাইল, কোলিন ,অ্যান্টিবায়োটিক, ফাইটোন সাইড, এবং পানি ছাড়াও অন্যান্য অনেক পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। যা অন্য কোন খাবার অথবা ওষুধের ভিতরে পাওয়া যায় না। তাছাড়া মধুতে রয়েছে ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড, ভিটামিন বি ১, বি২, বি৩, বি ৫, বি ৬, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, বা ক্যারোটিন ইত্যাদি সবকিছুই কম বেশি হারে বিদ্যমান ।এবং মধু এমন ধরনের একটা ওষুধ, নিবারক অ্যান্টিসেপটিক এবং কোলেস্টেরল বিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী। যে কারণে বছরের পর বছর মধু বাসায় রেখে দিলেও এটি নষ্ট হয় না। সবসময়ই ফ্রেশ এবং সুস্বাদু থাকে। ঋতু ভেদে অথবা বৈরী আবহাওয়া এটি নষ্ট হয় না। প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে খালি পেটে দুই চা চামচ এর মত মধু সেবন করলে এই সকল সমস্যার সমাধান হবে।

এক নজরে মধু খাওয়ার উপকারিতা


মধুর একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার। যা মৌমাছি ফুলের রস থেকে তৈরি করে। আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে মধু উপকারিতা ব্যাখ্যা করে শেষ করা সম্ভব নয়। মধুর একটি বড় গুণ হলো এটি কখনো নষ্ট হয় না। এমনকি কয়েক বছরের পুরানো মধু কোন দ্বিধা ছাড়াই খাওয়া যেতে পারে। তবে নির্ভেজাল বিশুদ্ধ মধু হতে হবে। মধু অত্যন্ত ঘন হওয়ার কারণে এর ভিতর কোন জীবাণু এক ঘন্টার বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। নিয়মিত মধু খাওয়ার ফলে শরীরে নানাবিধ পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। মধুতে সর্বমোট ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। যার ভিতরে গ্লুকোজ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুটজ, ৫ থেকে ১২ শতাংশ মনটোজ, ০.৫ থেকে ০.৩ শতাংশ সুক্রোজ, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ২২ শতাংশ এমাইনো এসিড এবং ১১ শতাংশ এনকাইম রয়েছে। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই বললেই চলে। গড়ে মিলে ১০০ গ্রাম মধুতে প্রায় ২৮৮ ক্যালোরি থাকে।

(১) হৃদরোগ প্রতিরোধ করে

এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে এবং রক্তনালী প্রসারণ এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন সহায়তা করে। তাছাড়া এর হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করায় শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে।

(২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

নিয়মিত মধু খাওয়ার ফলে শরীরে এন্টিসেপটিক এন্টি বডি তৈরি হয়।মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ হারে বাড়ায়। মধু খাওয়ার ফলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ প্রতিহত করা সহজ হয়।  বিশেষ করে মধুতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান আছে। এটি যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাছাড়া মধু খাওয়ার ফলে রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।মধুতে থাকা উপাদান রক্ত উত্তপাদনের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। মধুতে রক্তের উপাদান সমূহ কে (আর বি সি, ডব্লু বি সি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও শক্তিশালী করে।

আরো পড়ুন রোজা রেখে পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা

(৩) দাঁত পরিষ্কার রাখে

এটি দাঁত পরিষ্কার রাখে এবং দাঁত শক্তিশালী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং যাদের দৃষ্টি শক্তি কম তাদের ক্ষেত্রে এটি খুব উপকারী একটি খাবার। এটি মানুষের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।

(৪) স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে

অনেকেই আছে যাদের স্মরণ শক্তি অত্যন্ত দুর্বল।কোন কিছুই মনে রাখতে পারে না। অল্প সময়ের ভিতরে ভুলে যায়। তো তাদের এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য মধু একটি মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত মধু সেবন করার ফলে মানুষের এই সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে।

(৫) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা যা শরীরের বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে ।এবং শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ।যাতে করে শরীরে কোন রোগ জীবাণুর বাসা বাঁধতে না পারে। তাছাড়া এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে রাস করে। এবং শরীরের ফ্রিরেডিকেলের রক্ষা করে। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার যা নিয়মিত খাওয়া উচিত।

(৬) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

যারা মধু খায় নিয়ম করে তাদের শরীরের ত্বক এবং উজ্জ্বলতা সর্বদা বাড়তেই থাকে। এবং শরীরে বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে। মধু এবং কালিজিরা যদি একসাথে খাওয়া হয় তাহলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পায় ।এবং আমরা সবাই জানি শরীরের রক্ত বৃদ্ধি পেলে শরীর সুস্থ থাকে এবং সবদিক থেকে শরীরের উপকার হয়। সেই সাথে শরীরের ত্বক এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ।এবং সেই সাথে যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন বিশেষ করে মহিলারা তাদের জন্য নিয়মিত মধুসেবন অত্যন্ত ফলদায়ক।

(৭) পাকস্থলীর সমস্যা দূর করে

আন্ত্রিক রোগ উপকারী এই মধু ।এটি কে এককভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলী বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাকস্থলীর যে কোন সমস্যা বদ হজম অথবা অন্য কোন সমস্যা এটি সহজে নিরাময় করে। তাছাড়া আলসার ও গ্যাস্ট্রিক এর দারুন উপকার করে মধু। নিয়মিত মধু সেবন করলে গ্যাস্ট্রিকের হার অনেক অংশে কমে যায়।সেই সাথে মধুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ থাকায় মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের বিশাল উপকার করে থাকে।

(৮) গালে ঘা বা ক্ষত নিরাময় করে

যাদের গালের ভিতরে ঘা হয় রক্ত বের হয় তাদের ক্ষেত্রে মধু অত্যন্ত উপকারী একটি ওষুধ। নিয়মিত মধু সেবন করার ফলে তাদের এই সমস্যাটা সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে মধু সহায়ক হিসেবে কাজ করে ও উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।

মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। এক এক পদ্ধতিতে খাওয়ার ফলে এক এক ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। অনেকে আছে খালি পেটে মধু খেয়ে থাকে। খালি পেটে  এক চা চামচ মধু খাওয়া যেতে পারে। অথবা কুসুম গরম আধা গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে চাইলে লেবুর রস সাথে দিয়েও খেতে পারেন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেকে মধুর সাথে কালিজিরা মিশিয়ে খেয়ে থাকে। এটিও অনেক উপকারী। তাছাড়া মধুর সাথে রসুন, লেবু, আদা,ইত্যাদি দিয়েও অনেকে খেয়ে থাকে। 

মধুর অপকারিতা

সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে মধুর তেমন কোন ক্ষতিকারক দিক অথবা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে এটিকে সর্বদা পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত মাত্রায় মধু খাওয়ার ফলে শরীরে অস্থিরতা বা জ্বালা ভাব দেখা দিতে পারে। আবার অনেকে আছে মধু খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে মধু না খাওয়াটাই ভালো। তবে সবসময় এটি মনে রাখা উচিত, মধু একটি উচ্চ শক্তি সম্পন্ন খাবার যা পরিমাণ মতোই আহার করতে হবে।

Disclaimer

এছাড়াও আরো হাজারো উপকারী গুণ রয়েছে মধু এর ভিতরে। তবে একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত হারে মধু সেবন করা যাবে না, এতে করে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। এবং এটি সেবন করে রোদে না যাওয়াটাই ভালো।তো বন্ধুরা আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই ।আশা করি মধু সম্পর্কে আপনারা একটু হলেও জানতে পেরেছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ।কথা হবে পরবর্তী পোস্টে সেই পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।ধন্যবাদ সবাইকে।

কালোজিরা কেন খাবেন? জেনেনিন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা!



কালিজিরা যা আমাদের সবার পরিচিত একটি খাবার। শুধু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে নয়, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ও কবিরাজের  সাথেও কালিজিরার বহুল ব্যবহার পাওয়া যায়। কালোজিরা খুবই উপকারী একটি ভেজষ গুণ সমৃদ্ধ খাবার। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একে সর্ব রোগহারী ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছে। অর্থাৎ কথায় আছে মৃত্যু ছাড়া সর্ব রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে কালোজিরা। কালোজিরের বীজ থেকে এক ধরনের তৈরি করা হয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন এবং দরকারি একটি উপাদান।

প্রাচীনকাল থেকে এটি নানা রোগের প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রতি এক গ্রাম কালিজিরা যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম আয়রন, ফসফরাস কপার, জিংক ,এবং ফুলাসিন বিদ্যমান থাকে। কালোজিরা সবার পরিচিত একটি নাম। যা সকল প্রকার মানুষেরা ভালোভাবে চেনে।

 কালোজিরা সাধারন্ত খাবারের ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে কোন রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করলে সেই রান্নার পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আজকাল দেখা যায় কালো জিরে দিয়ে সাদা আলু চচ্চড়ি, ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল, এছাড়াও নিমকি তৈরি করা হয়ে থাকে। এসব খাবার অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন চপ  তৈরি বেসনের গোলাতেও কালোজিরা মেশানো হয়ে থাকে। খুব বহু দিন থেকে কালিজিরা মানব দেহের প্রতিরোধক  হিসেবে কাজ করে আসছে। এজন্য এ কে সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয়ে থাকে। তাই আমাদের মানব শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া করা উচিত।

নিয়মিত কালোজিরা সেবন করার ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ কার্যক্ষমতা আরো শক্তিশালী করে তোলে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বতেজ থাকে এবং যেকোনো জীবনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে। তাছাড়া সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। যাদের নিয়মিতভাবে পেটের সমস্যা হয়ে থাকে, পেটে ব্যথা অথবা পেটের বিভিন্ন সমস্যা থাকলে, কালিজিরা সামান্য ভেজে গুড়া করে, ৫০০ মিলিগ্রাম হারে সাত থেকে আট চা চামোচ দুধে মিশিয়ে সকাল এবং বিকালে সাত দিন ধরে নিয়মিত সেবন করলে, বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া সকালে কালোজিরা সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দেয়। যে কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেকে মনে করেন মধু যেহেতু মিষ্টি জিনিস সেহেতু মধুতে হয়তো ডায়াবেটিস বৃদ্ধি করে। আসলে কথাটি সম্পূর্ণ ভুল ,আমি আগের পোস্টে মধু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ,এবং সেখানে ডায়াবেটিস সম্পর্ক আলোচনা করেছি। আপনারা ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে হলে আগের পোস্টটি দেখে নিতে পারেন, এবং সেখান থেকে এটি বুঝতে পারবেন যে মধু এবং কালিজিরা একসাথে খেলে ডায়াবেটিসের উপকার হয় এতে কোন ক্ষতি হয় না।


যাদের বাতের ব্যথা আছে। যেখানে সেখানে ব্যথা হয়। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে কালিজিরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাতের ব্যথায় আরাম পেতে ব্যথার জায়গায় ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে সেখানে কালিজিরার তেল আলতোভাবে মালিশ করে নিন। ১ চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে এক চা চামচ কালিজিরা তেল ও একটা চামচ মধু মিশিয়ে দিলে তিনবার খেতে পারেন। এভাবে দুই থেকে তিন সপ্তাহ নিয়মিত সেবন করলে আপনার দাঁতের ব্যথা নির্মূল হয়ে যাবে। অনেকে আছে যারা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন তাদের জন্য এক আশ্চর্যজনক ওষুধ হল কালোজিরা। কালোজিরা থেকে তৈরি করা তেল আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদি রিউমেটিক এবং পিঠের ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া কালোজিরা এবং মধু খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়ে থাকে।



সর্দি কাশি জন্য কালিজিরা মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে । সর্দি কাশিতে আরাম পেতে এক চা চামচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে  আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করুন দেখবেন, আপনার সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাছাড়া পাতলা কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে, নাকের কাছে নিয়ে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে সুখলে আপনার বন্ধ নাক ছেড়ে দিবে। এবং সর্দি থেকে দ্রুত উপশম মিলবে। পাশাপাশি এক চা চামচ কালোজিরা সঙ্গে তিন চা চামচ মধু ও দুই চা চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর সর্দি মাথাব্যথা এসব কমে যাবে। এবং বুকে যদি কফ বসে যায় কালিজিরা বেটে মোটা করে  প্রলেপ দিলে  দ্রুত উপশম পাবেন।  একই সাথে হাপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য কালোজিরা দারুণ উপকার করে থাকে। নিয়মিত হারে  কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

তাছাড়া এটি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাদের ব্লাড প্রেসারের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে এবং কালোজিরা তেল সারা শরীরে মেখে রোদে আধা ঘন্টা থাকলে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। পাশাপাশি এক চা চামচ কালোজিরা তেল একটা চামচ মধু মিশিয়ে খেলেও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত যদি কালোজিরা খাওয়া হয় তাহলে দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয়। এতে করে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটে। যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের আজকের পোস্টটি। আশা করি এটি পড়ে সবার ভালো লাগছে। একটু হলেও জানতে পেরেছেন কালোজিরা সম্পর্কে। পোস্টটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করব আপনার কমেন্টের উত্তর দেওয়ার। এতক্ষণ ধরে লেখাটি কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিজের শরীরের যত্ন নিবেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন এবং প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা করবেন।

 লাউ শাক কেন খাবেন ? এটি খেলে কি হয়?  জেনে নিন লাউশাক  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা!



লাউশাক আমাদের দেশের খুবই জনপ্রিয় একটি শাক। লাউশাক পছন্দ করে না এমন লোক খুবই কমই আছে। ছোট বড় সবারই পছন্দ এই লাউ শাক। বাংলাদেশের সর্বত্রই লাউশাক দেখতে পাওয়া যায়, তবে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এটির চাষ বেশি পরিমাণে করা হয়। লাউশাক খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। একটি খাবারে রয়েছে হাজারো পুষ্টিগুণে ভরা এবং এটি খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি চাহিদা অথবা পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে।

লাউ শাক সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে শীতের মৌসুমী এটি বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। শুধু ফলনই বেশি হয় না, শীতের মৌসুমে লাউ শাক খেতে অনেক সুস্বাদু লাগে। লাউ শাক খাওয়ার ফলে বিভিন্ন পুষ্টির চাহিদা পুরন তো হবেই সেই সাথে রয়েছে স্বাস্থ্যেরও নানাবিধ উপকারিতা। যা আপনার শরীরকে সুস্থ সবল ও সতেজ রাখতে দারুন ভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এক নজরে লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নি!

লাউ শাকে প্রধান উপাদান রয়েছে আয়রন । আয়রন থাকার কারণে  রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ এবং লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে শরীরের রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। আর আমরা তো জানি ভিটামিন সি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। ভিটামিন সি বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও ঠান্ডা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লাউ শাক যথেষ্ট উপকারী সবজি এবং যারা ডায়েট কন্ট্রোল করে তাদের ক্ষেত্রে লাউশাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার।

লাউশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। এর ফলে শরীরে ঘামজনিত লবনের ঘাঁটতি দূর করে। যারা অতিরিক্ত মাত্রায় ঘেমে যায় শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ বের হয়ে যায় তাদের ক্ষেত্রে লাউ শাক অতন্ত উপকারী একটি খাবার। এটি খাবার ফলে আপনার শরীরে লবণের ঘাটতি দূর করবে এবং সেইসাথে দাঁত ও হাড়কে মজবুত করবে। যাদের কোষ্ঠকাণীষ্ঠ সমস্যা আছে তারা লাউ শাক খেতে পারেন। এছাড়াও যাদের পাইলসের সমস্যা আছে তারাও লাউ শাক খেতে পারেন। এতে আপনার সমস্যা অনেক অংশে হ্রাশ পাবে।

বিটা ক্যারোটিন লুটেইন এবং জিয়েজ্যান্থিনে পরিপূর্ণ হল এই লাউশাক। আমরা তো সবাই জানি বিটা ক্যারোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লুটেইন এবং  জিয়েজ্যান্থিনে চোখে নানাবিধ রোগের প্রতিরোধ করে থাকে ।যাদের চোখে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে লাউশাক অত্যন্ত দরকারি এবং পুষ্টিকর একটি খাবার। তাছাড়া এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে এবং পরিপূর্ণ ঘুম হয়। যাদের অতিরিক্ত মাথা গরম থাকে এবং ঠিকমতো ঘুম হয় না তাদের ক্ষেত্রে লাউশাক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাউ শাক খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের সাথে সাথে মাথাও ঠান্ডা থাকবে এবং গভীর ঘুম হবে।ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। অস্টিওপরেসিস এবং অন্যান্য ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত রোগের ঝুঁকিও কমায় এই লাউশাক।

লাউশাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যা মানব শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে থাকে। তবে ভিটামিন সি থেকে পটাশিয়ামের কার্যকারিতা অনেক শক্তিশালী। এমনকি যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে লাউশাক ওষুধের মত কাজ করে।  নিয়মিত লাউশাক খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এবং যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারা নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে লাউশাক খেতে পারেন।


এছাড়াও আরো অনেক উপকার এবং পুষ্টিগুণে ভরা লাউশাক। যা আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশেও আজকাল লাউশাকের চাষ করা হচ্ছে। এতে করে যেমন দেশে পুষ্টি ঘাটতি চাহিদা পূরণ হচ্ছে, সেই সাথে বাজারজাত করে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। ব্যবসায়িকভাবে না হলেও অনেকের বাড়ির আঙিনায় অথবা বাড়ির ছাদে দেখা যায় এই লাউ গাছ লাগানো। এতে করে যেমন পরিবারে পুষ্টির চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে ,সেই সাথে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। তো পরিশেষে আমরা এটা বলতে পারি যে, লাউ শাক অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার এবং সেই সাথে লাউ অত্যন্ত সুষম এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি খাবার। সুতরাং আমরা লাউশাক চাষ করতে পারি। সেই সাথে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করতে পারি।

নিচে ১০০ গ্রাম লাউশাক এর পুষ্টি গুণ উল্লেখ করা হলো!

১০০ গ্রাম লাউয়ের রয়েছে জলীয় অংশ ৯৬.১০ গ্রাম, আঁষ ০.৬গ্রাম, আমিষ ০.২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ২.৫ গ্রাম, এবং খাদ্য শক্তি ১২ কিলো ক্যালরি।

তো বন্ধুরা এই ছিল আমাদের লাউ শাক সম্পর্কে আজকের প্রতিবেদন। আশা করি আপনারা সবাই লাউশাক সম্পর্কে বুঝতে পারছেন এবং অনেক কিছুই জানতে পারছেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। কথা হবে পরবর্তী পোস্টে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। নিয়মিত শরীর চর্চা করুন এবং সুষম খাবার গ্রহণ করুন।

 ধন্যবাদ

Post a Comment

Previous Post Next Post