কাঁঠালের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ Health Tips | btwontyone.xyz

 

কাঁঠালের পরিচিতি

https://www.sbdfoodtips.xyz/2023/03/Benefits-and-nutritional-value-of-jackfruit-Health-Tips.html


কাঁঠাল জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু একটি ফল। এর ইংরেজি নাম হল জ্যাকফ্রুট (jackfruit) । এটি আমাদের দেশের জাতীয় ফল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানেই কমবেশি কাঁঠাল পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চল  সমূহের বেশি জন্মাতে দেখা যায়। কাঁঠাল বসন্ত এবং গ্রীষ্মের প্রথমে কাঁচা অবস্থায় এবং  গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময় পাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ফলটি আকারে অন্যান্য ফলের থেকে বেশ বড় হয়ে থাকে। আপনি জানলে অবাক হবেন যে কাঁঠালের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। পুষ্টিবিদদের মতে কাঁঠালের চার থেকে পাঁচ কোয়াতে প্রায় ১০০ কিলো ক্যালোরি খাদ্য শক্তি পাওয়া যায়।

কাঁঠালের স্বাস্থ্য উপকারিতা 

মৌসুমী ফল কাঁঠালের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন   একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন মাত্র দুই থেকে তিন কোয়া কাঁঠাল   খেয়ে ভিটামিন  এর ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এজন্য কাঁঠাল অপুষ্টি জনিত সমস্যায় বিশেষ করে রাত কানা এবং রাতকানা থেকে অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষ উপযোগী একটি ফল। শিশু-কিশোর,  কিশোরী নারী পুরুষ সব শ্রেণীর মানুষের জন্যই কাঁঠাল খুবই উপকারী। গর্ভবতী মহিলা অথবা যেসব মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ান বাচ্চাদের, তাদের জন্য কাঁঠাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাবার। শরীরে যদি ভিটামিন এ এর ঘাটতি দেখা দেয় তবে ত্বক খসখসে হয়ে যায়। শরীরের লাবণ্য এবং উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। তাই এটি প্রতিরোধ করতে কাঁঠাল খুবই উপকারী একটি ফল। এছাড়াও কাঁঠালের ভিতর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং কিছুটা ভিটামিন বি রয়েছে।

কাঁঠালের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

কাঁঠাল পুষ্টি গুনে ভরপুর।এতে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, কার্বন সহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান। কাঁঠালে থাকা প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ত্বক সুন্দর রাখার ক্ষেত্রেও নিয়মিত কাঁঠাল খেতে পারেন। কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি আপনার শরীরে উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা পটাশিয়াম ,ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন এ থাকায় চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাঁঠালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্লাবনয়েড ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধ করে। যেটা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এটি খাওয়ার কিছু সময়ের ভিতর শক্তি পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আশ থাকায় হজমেও সহজ হয়। কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি অস্টিওপোরোসিস রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কাঠালে থাকা কপার থাইরয়েড গ্রন্থিকে বিশেষ যত্ন নেয়।

পাকা কাঁঠালের যত উপকারিতা

কাঁঠাল সাধারণত দুইভাবে খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় রান্না করে এবং পাকা অবস্থায় খাওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ মানুষ পাকা অবস্থায় কাঁঠাল খেতে বেশি পছন্দ করে। পাকা অবস্থায় কাঁঠাল খাওয়ার ফলে মিলতে পারে অনেক উপকারিতা। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক পাকা কাঁঠালের উপকারিতা সম্পর্কে।

১. কম চর্বি যুক্ত খাবার

কাঠাঁলে চর্বির পরিমাণ নিতান্তই কম। এই ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম থাকে। সুতরাং যারা ওজন নিয়ে টেনশনে আছেন তাদের ক্ষেত্রে কাঁঠাল খাওয়াটা মোটেও অনিরাপদ নয়।

https://www.sbdfoodtips.xyz/2023/03/Benefits-and-nutritional-value-of-jackfruit-Health-Tips.html

২. রক্তচাপ কমায়

পাকা কাঁঠালের পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে 100 গ্রাম পাকা কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ মিলিগ্রাম। যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এজন্য পাকা কাঁঠাল খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের উপশম পাওয়া যায় ।

৩. ভিটামিন সি এ উৎস

পাকা কাঁঠালের অন্যতম উপযোগিতা হলো ভিটামিন সি। আর শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে কাঁঠালের বিকল্প নেই। মানবদেহে ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেইসাথে দাঁতের মাড়িকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে থাকে। 

আরো পড়ুন গরমে যে কারণে তরমুজের চাহিদা সবথেকে বেশি 

৪.বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সক্ষম

কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ এবং আলসার সহ বার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কাঁঠালে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা মানুষের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রী রেডিকেল থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া আমাদের এটি শরীরের সর্দি কাশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে।

৫. টেনশন অথবা নার্ভাসনেস কমায়

টেনশন অথবা নার্ভাসনেস কমাতে কাঁঠাল খুবই কার্যকরী। যাদের এই ধরনের সমস্যা হয় তারা বেশি করে পাকা কাঁঠাল খেতে পারেন। এতে আপনার সমস্যার অনেকটাই উপশম ঘটবে। 

৬. ম্যাঙ্গানিজ এর উৎস

কাঁঠালের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান ম্যাঙ্গানিজ। যা শরীরের রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৭ সুষ্ঠ রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া করে

পাকা কাঠালের বিদ্যমান ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য উপকারী নয়। এটি রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সমাধানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

৮ শিশুদের পুষ্টি অভাব পূরন করে

ছয় মাস বয়স হবার পর থেকেই একটা শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস খেতে দেওয়া যেতে পারে। এতে শিশুর ক্ষুধা নিবারণ হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হবে।চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় 200 গ্রাম তাজা পাকা কাঁঠাল একজন গর্ভবতী মহিলাকে খেতে দিলে তার গর্ভধারণ শিশুর সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পুরন হবে। এজন্য গর্ভবতী মহিলারা কাঁঠাল খেলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভে সন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়।

৯.দুগ্ধদানকারী মায়েদের উৎকৃষ্ট খাবার 

দুগ্ধদানকারী মায়েদের তাজা পাকাকাঁঠাল খুবই উপকারী একটি খাবার। নিয়মিত পাকাকাঁঠাল  খাওয়ার ফলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

১০ আয়রনে ভরপুর

এছাড়াও পাকা কাঠালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা দেহের রক্তস্বল্পতা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।শরিরের জন্য আয়রন একটি অতি প্রয়োজনিয় পুষ্টি উপাদান।  

কাঁচা কাঁঠাল কেন খাবেন? কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতা

পাকা কাঁঠালে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কাঁচাকাঁঠালও কম উপকারী নয়। পাকা কাঁঠাল খাওয়ার পাশাপাশি কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খাওয়ার জনপ্রিয়তা ও রয়েছে ব্যাপক। কাচাকাঁঠাল সাধারণত  ইচোর রান্না করে খাওয়া হয়।এছাড়াও কাঁচাকাঁঠাল আরো অনেক ভাবেই তরকারি রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। কাঁচা কাঁঠাল আমিষ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ তরকারি। যাদের শরীরে আমিষের ঘাটতি দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা কাঁঠাল একটি উৎকৃষ্ট খাবার। নিয়মিত কাঁচা কাঁঠাল খাওয়ার ফলে পূরণ হতে পারে আপনার শরীরে আমিষের ঘাটতি। 

কাঁঠালের বিচি খাওয়ার উপকারিতা

পাকা কাঁঠালের বিচি যেমন বাদামের মত ভেজে খাওয়া যায় তেমনি রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে। ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে প্রায় 6.6 গ্রাম আমিষ পাওয়া যায় ও ২৫.৮ গ্রাম শর্করা। সুতরাং সবার জন্যই আমিষ সমৃদ্ধ কাঠালের বিচি খাওয়া বেশ উপকারী। এজন্য বেশি বেশি করে কাঁঠাল গাছ লাগানো উচিত। সেই সঙ্গে কাঠাল ফলটি খেয়ে ভিটামিন এর সব ধরনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।

Disclaimer

পরিশেষে আমরা বলতে পারি কাঁঠাল একটি উৎকৃষ্ট খাবার। যা প্রত্যেকটা মানুষের জন্য খুবই উপকারী। সুতরাং সামনেই গরমের মৌসুম কাঁঠাল পাকতে শুরু করবে। তাইবেশি করে নিয়মিত কাঁঠাল খান এবং শরীরের যাবতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করুন ।


Post a Comment

Previous Post Next Post